শীতের সময়ই ঠোঁটের যত্ন নেয়াটা একটু বেশিই দরকার। এর কারণ হলো আদ্রতা। শীতের আর্দ্রতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঠোঁট। এই সময় ঠোঁট ফাটা থেকে শুরু করে ঠোঁটের নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। শীতে সাধারণত কয়েকটি কারণে ঠোঁটের মারাত্নক সমস্যা হয়। সেই সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়ার উপায় নিয়েই এই প্রতিবেদন।
শুষ্ক আবহাওয়া :
শীতে সাধারণত বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। এর ফলে মানবদেহের ত্বক দিয়ে বেরিয়ে আসা পানি দ্রুত শুকিয়ে যায়। এতে ত্বকের উপরের স্তর ফেটে যায়। আর এই কারণে ঠোঁটেই এরূপ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
অধিক রোদ ও গরমের স্পর্শ :
যারা ঠোঁটে অধিকমাত্রায় রোদ ও গরমের স্পর্শ দেন, তাদের ঠোঁট স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কালো ও শুকনো হতে পারে। আর শীতে গরম চা ও অন্যান্য গরম পানীয়ের স্পর্শে নানান প্রদাহ হতে পারে।
প্রসাধনীর ব্যবহার :
ঠোঁটে অধিক প্রসাধনীর ব্যবহারে ক্ষতিকর প্রভাব পরতে পারে। অনেক সময় বিভিন্ন প্রসাধনসামগ্রী যেমন, লিপস্টিক, লিপ লাইনার, ক্রিম ইত্যাদির ব্যবহারে ঠোঁটে নানা ধরনের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই সমস্যার কারণে ঠোঁটের ত্বকে তীব্র প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে।
জীবাণু সংক্রমণ :
মানবদেহের ঠোঁটে অনেক সময় হারপিস সিমপ্লেক্স নামক একটি ভাইরাস ইনফেকশন হয়। আবার ক্যানডিডা নামক ছত্রাক জাতীয় একটি জীবাণুও ঠোঁটে সমস্যা তৈরি করে। অন্যদিকে, বিশেষ যৌনাচারের ফলেও ঠোঁটে বেশ কিছু সংক্রামক যৌনরোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
উল্লিখিত সমস্যা থেকে প্রতিকার :
ঘরে থাকা উপকরণ দিয়ে সামান্য যত্ন নিলেই ঠোঁট ফাটার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে চিনি, লেবুর রস, মধু ও নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে পাতলা কাপড় দিয়ে হালকা করে ঘষুন। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর ঠোঁটে লিপবাম লাগান। এতে ঠোঁটের মরা চামড়া দূর হবে। এভাবে নিয়মিত ঠোঁটের যত্ন নিলে এই শীতেও ঠোঁট ফাটার ভয় থাকবে না।
ঠোঁটের কালচেভাব দূর করুন :
ঠোঁটের কালচেভাব দূর করতে দুধের সর বা মাখনের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ঠোঁটে লাগান। এছাড়া গোলাপের পাপড়ি পেস্ট বানিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন সারারাত। নিয়মিত এসব উপকরণগুলো ব্যবহার করলে ঠোঁটের কালচেভাব দূর হবে।
শাক – সবজি, ফলমূল খান পর্যাপ্ত :
শীতকাল মানেই শাক – সবজি ও ফলমূহের সমাহার। এই ঋতুতে বাজারে পাওয়া যায় নানারকম ফলমূল ও শাক – সবজি। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে শাক – সবজি ও ফলমূল রাখুন। কারণ, প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণের অভাবেও ঠোঁট ফ্যাকাশে বা কালচে হয়ে যেতে পারে। দিনে দুইবার ফল এবং তিনবার কয়েকরকম শাক – সবজি খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
প্রচুর পানি খান :
শীতকালে অনেকেই পানি কম খেয়ে থাকেন। এর ফলে ত্বক ও ঠোঁটের আর্দ্রতা হারায়। প্রতিদিন অনন্ত দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। শরীরে পানিশূন্যতা থাকলে ঠোঁট উজ্জ্বল দেখায় না। তাই এই সময় পর্যাপ্ত পানি খাওয়া জরুরী।
বদঅভ্যাস ত্যাগ করতে হবে :
ঠোঁট শুষ্ক হলে অনেকেই জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট বার বার ভেজায়। এটা খুবই খারাপ অভ্যাস। এভাবে ঠোঁট ভেজালে আপনার ঠোঁট আরো বেশি ফাটবে। তাই ব্যাগে সবসময় লিপবাম রাখুন। ঠোঁট শুষ্ক হলেই ঝটপট একটু লিপবাম লাগিয়ে নিন।
ঠোঁট পরিষ্কার রাখতে হবে : শীতের সময় বাতাসে ধুলোবালি থাকে বেশি। ফলে বাইরে বের হলেই ঠোঁটে ধুলোবালি জমে যায়। তাই বাসায় ফিরে ঠোঁট পরিষ্কার করে লিপবাম লাগতে হবে।
শীতকালে ত্বক ও ঠোঁটের বাড়তি যত্ন নিতে হয়। তাছাড়া ত্বক ও ঠোঁটের সুস্থতার জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও পর্যাপ্ত ঘুমানো দরকার।
মডেল : রন্ধনশিল্পী – মডেল – অভিনেত্রী
ইভা বিনতে সানোয়ার