1. admin@newswatchbd.com : admin :
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ অপরাহ্ন

ইসলামের আলোকে মৃতদের নিয়ে জীবতদের করণীয়

নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪

 

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণিকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কেয়ামতের দিন তোমাদের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। তারপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।’(সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১৮৫)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং তোমরা আমার কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩৫)।আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও।’(সুরা আন নিসা, আয়াত: ৭৮)।

কেউ মারা গেলে তার প্রশংসা করায় রয়েছে বিশেষ উপকার। আবার কেউ যদি মৃত ব্যক্তির খারাপ গুণ বর্ণনা করে তবে এর পরিণামও খুবই খারাপ। এজন্য কেউ মারা গেলে তার খারাপ গুণ বলে বেড়ানো থেকে বিরত থাকা জরুরি। ব্যক্তির ভালো গুণ প্রকাশ করায় রয়েছে কল্যাণ ও উপকারিতা। দু’টি বিষয়ই ওঠে এসেছে হাদিসের বর্ণনায়। বিষয় দুটি সম্পর্কে নবিজী (সা.) কী বলেছেন?

মৃত ব্যক্তির জন্য ভালো প্রশংসায় রয়েছে মুক্তি আর মন্দ গুণ বর্ণনায় রয়েছে মারাত্মক ক্ষতি তথা চিরস্থায়ী জাহান্নাম। হাদিসে বিষয় দু’টি এভাবে ওঠে এসেছে- হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ দিয়ে একটি জানাজা গেলো। এরপর তার উত্তম প্রশংসা করা হলো, উত্তম প্রশংসা মুখে মুখে হতে থাকলো; তারা বললো- আমাদের জানা মতে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসতো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তিনবার) বললেন- ‘অপরিহার্য হয়ে গেল। অপরিহার্য হয়ে গেল। অপরিহার্য হয়ে গেল।’

এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ দিয়ে আরও একটি জানাজা নিয়ে যাওয়া হলো। ওই জানাজায় নিন্দা বা মন্দ বলা হলো। (ওই জানাজার নিন্দাও মুখে-মুখে লেগে থাকলো। তারা বললো- লোকটি আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে কতই না খারাপ ছিল!)। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তিনবার) বললেন, অপরিহার্য হয়ে গেল। অপরিহার্য হয়ে গেল। অপরিহার্য হয়ে গেল।

এবার হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার জন্য আমার বাবা-মা কোরবান হোক। আপনি একটি জানাজার প্রশংসা করায় তিনবার বললেন- ‘অপরিহার্য হয়ে গেল’। আবার অপর জানাজায় মন্দ বলায়ও আপনি তিনবার বললেন- ‘অপরিহার্য হলে গেল’। এর মর্মার্থ কী?

এবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা যার উত্তম প্রশংসা করলে- তার জান্নাত অপরিহার্য হয়ে গেল। আর তোমরা যার নিন্দা করলে- তার জন্য জাহান্নাম অপরিহার্য হয়ে গেল। (এরপর নবিজী আরও তিনবার বললেন)- আর তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী, তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী, তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী। (মুসলিম)

মৃত ব্যক্তির ভালো কাজের আলোচনা: আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং: ৪৯০০)।

মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাগফিরাত করা: এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহর নবী ইবরাহিম(আ.)-এর দোয়া বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সব ঈমানদারকে ক্ষমা করুন।’(সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১)।

অন্য জায়গায় নূহ আলাইহিস সালামের এ দুআ বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও এবং যে ঈমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে আর সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও।’(সুরা নুহ, আয়াত: ২৮)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন মানুষ মারা যায় তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমলের ফায়দা ভোগ করে— সদকায়ে জারিয়া; এমন জ্ঞান, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং ওই সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম, হাদিস নং : ১৬৩১)।

মৃত ব্যক্তির সওয়াবের উদ্দেশ্যে দান-সদকা করা: আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে উবাদা (রা.)-এর অনুপস্থিতিতে তার মা ইন্তেকাল করেন। তিনি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি যদি তাঁর পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তাঁর কোনো উপকারে আসবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। সাদ (রা.) বলেন, “আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমার ‘মিখরাফ’ নামক বাগানটি আমার মায়ের জন্য সদকা করে দিলাম। ”(বুখারি, হাদিস: ২৭৫৬)

আবু হুরায়রা(রা.) থেকে বর্ণিত, একব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করে, আমার পিতা ইন্তেকাল করেছেন এবং ধন-সম্পদ রেখে গেছেন কিন্তু অসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার (গোনাহের) কাফফারা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (মুসলিম, হাদিস নং: ১৬৩০)।

মৃতদের কবর জিয়ারত করা: আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি এর আগে তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, তবে এখন থেকে অনুমতি দিলাম, তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদের দুনিয়াবিমুখ করে এবং পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১৫৭১)

হাদিসে বর্ণিত কবর জিয়ারতের একটি দোয়া এরকম, (অর্থ) ‘এই কবরস্থানের বাসিন্দা মুসলিম-মুমিনদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। ইনশাআল্লাহ আমরাও আপনাদের সাথে মিলিত হব।’(মুসলিম, হাদিস নং: ৯৭৪)।

হাদিসের আলোকে শিক্ষা ও করণীয়: কোনো মুমিন মুসলমান মারা গেলে, তার প্রশংসা করা; ভালো গুণগুলো বলা উত্তম। এতে তার জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতের ফয়সালা করে দেবেন। আর যদি কোনো মন্দ ব্যক্তি মারা যায় তবে তার ব্যাপারে কোনো কিছু বলা থেকে বিরত থাকাই উত্তম। মহান আল্লাহ তাআলাই তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। সুতরাং দুনিয়ায় প্রতিটি মানুষের এমন কাজ করা জরুরি। যাতে মৃত্যুর পর মানুষ তার প্রশংসা করতে পারে। এ প্রশংসাই মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

কেউ মারা গেলে তার নামে ‘কুলখানি’ বা ‘চল্লিশা’ নামে যে ভোজনের আয়োজন করা হয়, তা ইসলাম সমর্থন করে না। তবে কেউ যদি মৃত ব্যক্তির কাছে সওয়াব পৌঁছানের নিয়তে গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের খাবার খাওয়ায়, তাহলে সেটা বৈধ।

কারো মৃত্যুর পর মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে খাওয়া তো দূরের কথা—উল্টো তিনদিন মৃতের শোকাহত পরিবারের জন্য খাবার আয়োজন করার নির্দেশ করেছে ইসলাম।(আবু দাউদ, হাদিস : ৩১৩৪)। কিন্তু আমাদের সমাজে ‘কুলখানি’, ‘চল্লিশা’ ইত্যাদির নামে উল্টো তাদের ওপর খরচের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। সমাজের নামে খাবার ও ভোজনের আয়োজন করতে স্নায়ুভাবে তাদের বাধ্য করা হয়। হাদিসে জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘আমরা [রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে] মৃত ব্যক্তির বাড়ির আনুষ্ঠানিকতা ও খাদ্যায়োজনকে (শরিয়ত নিষিদ্ধ) মাতম বলে গণ্য করতাম।’(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং: ৬৮৬৬, ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১৬১২)। অতএব, মৃতের বাড়িতে শুধু খাবারের আয়োজন ও ভোজনপর্ব নয়, বরং তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা, তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া মুমিনের কাজ। তাই সাধ্য মোতাবেক মৃতের পরিবারকে সহযোগিতা করা ও মৃতের সওয়াবে জন্য কিছু আমল ও কাজ করা অপরিহার্য। প্রথাসর্বস্ব আয়োজন ও অপচয় থেকে বেঁচে থাকাও ইসলামে কাম্য। আল্লাহ আমাদের উত্তম কাজে তাওফিক দান করুন।

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ নিউজ ওয়াচ বিডি
প্রযুক্তি সহায়তায় Shakil IT Park