আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ, এখনই’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ও মানবাধিকার আন্দোলনকারীরা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে শিক্ষাবিদ এবং অধিকারকর্মীরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্ববর্তী মামলাগুলোর বিচার সম্পন্ন করার এবং বছরের পর বছর অপেক্ষা করে থাকা সমস্ত ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. সামিনা লুৎফা বলেন, “বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষার অন্যতম প্রধান শর্ত হল মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার বিচার করা এবং গত ১৫ বছরে যেসব ব্যক্তি ও পরিবারের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তাদের বিচার নিশ্চিত করা।” তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানে হত্যা-নির্যাতন এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সামিনা সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানের সময় সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামত দ্বারা প্রভাবিত না হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মানবাধিকারের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ধর্ম, বর্ণ-সংস্কৃতি নির্বিশেষে সবার দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামতকে মূল্যায়ন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিটি ধর্ম, প্রতিটি সংস্কৃতি, সম্প্রদায় এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। এ বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য ও উদ্যোগ থাকতে হবে।
বিশিষ্ট অধিকারকর্মী নুর খান লিটন জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের মানবাধিকারের দৃশ্যপট কীভাবে পাল্টে গেছে তা উল্লেখ করে বলেন, “অভ্যুত্থানের আগে, আমরা ভয়ে আচ্ছন্ন ছিলাম এবং নির্যাতনের ঘটনাগুলো ১৬ বছর ধরে চাপা ছিল”।
তিনি বলেন, “গত ১৬ বছরে প্রায় পনের শতাধিক মানুষ নিখোঁজ হয়েছে। এর মধ্যে কিছু পরিবার এখনো তাদের প্রিয়জনের কোনো হদিস পায়নি। কিছু পরিবার লাশ পেয়েছে। বাকিরা ৫ আগস্ট স্বাধীনতা না পাওয়া পর্যন্ত চুপ করে ছিল।” .
তিনি আরো বলেন, যাইহোক, অন্তর্বর্তী সরকার গুমের বিষয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করায় মানুষ অবশেষে তাদের ঘটনাগুলো বলতে শুরু করেছে। যা অধিকার কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।তিনি বলেন, “দেশ আরেকটি উন্নয়নের সাক্ষী হতে যাচ্ছে। আমরা ক্রসফায়ারের নামে হত্যার খবর সংবাদপত্রে আর দেখি না। যদিও জনতার বিচারের নামে কিছু ঘটনা ঘটছে, বেশিরভাগই ক্ষমতাচ্যুত শাসকের সমর্থকরা এর শিকার হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “একজন অধিকার কর্মী হিসাবে আমি মনে করি, ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসনামলে ক্রসফায়ারের নামে এবং অন্যান্য উপায়ে বিরোধী দলের কর্মী এবং নির্দোষ ব্যক্তিদের যে হত্যা করা হয়েছে প্রতিটি হত্যার তদন্ত করা জরুরী। তিনি সরকারকে প্রতিটি বিচার বহির্ভূত হত্যার তদন্তের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।
কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ৫ আগস্টের পর দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে নুর খান বলেন, সরকার যেভাবে কাজ করছে এটি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।
মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি মামলাকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “মানবাধিকার লঙ্ঘনের মামলা মোকাবেলায় সরকারের প্রচেষ্টা ভুক্তভোগীদের প্রত্যাশার সাথে মেলে না।”
তিনি বলেন, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার এবং শাপলা চত্বরে নিহত ব্যক্তিদের একই গুরুত্ব দেওয়া উচিত যেমনটি জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের দেওয়া হয়।
প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস পালিত হয়। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা গৃহীত হয়েছিল।